মৃত নারীদের ধর্ষণের কথা আদালতে স্বীকার’ করলো মুন্না
খবরের সময় ডেস্ক
ঢাকার শ্যামলীতে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে মৃত নারীদের ধর্ষণ করার অভিযোগে গ্রেফতার মুন্না ভগত আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদ শুক্রবার (২০ নভেম্বর) এ জবানবন্দি গ্রহণ করেন।পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।আদালতের জিআর শাখার নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনির আসাদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জিআর সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গ্রেফতার মুন্না ভগতকে আদালতে হাজির করেন।এসময় মুন্না স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি থাকায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ভগতের জবানবন্দি রেকর্ড করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।ডোম জতন কুমার লালের ভাগিনা মুন্না ভগত। তিনি মামার সঙ্গেই ওই হাসপাতাল মর্গে সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন।দুই-তিন বছর ধরে মুন্না মর্গে থাকা মৃত নারীদের ধর্ষণ করে আসছিল। এ অভিযোগের সত্যতা পেয়ে বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) তাকে আটক করে সিআইডি। মুন্নাকে ধরতে বিশেষ কৌশল নিতে হয় সিআইডিকে।অনুসন্ধানে নেমে সিআইডি জানতে পারে,সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গের মূল ডোম রজত কুমার। তাকে সহায়তা করে আরও ৫/৬ জন।তার মধ্যে রজতের ভাগ্নে মুন্না ভগত রাতে মর্গের পাশেই একটি কক্ষে থাকে।মুন্নাকেই সন্দেহ হয় সিআইডির।গুমের শিকার হওয়া এক যুবকের স্বজন সেজে মুন্নার সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন সিআইডির দুই কর্মকর্তা।তাদের একজন জানান, বেশ কয়েকদিন লাগাতার তারা মুন্নাকে ফলো করতে থাকেন।রাতে মুন্নাই থাকে এটি নিশ্চিত হতে তারা রাত ১টা বা ২টায়ও মর্গে গিয়েছেন।ছবি দেখিয়ে জানতে চেয়েছেন এই চেহারার কোনো লাশ মর্গে এসেছে কিনা।সম্পর্ক গাঢ় হলে,কৌশলে মুন্নার পান করা সিগারেটের ফিল্টার সংগ্রহ করেন তারা।ফিল্টার থেকে সংগ্রহ করা ডিএনএ’র সাথে মিলে যায় ওই পাঁচ কিশোরীর দেহে পাওয়া ডিএনএ’র।এর আগে,১০নভেম্বর সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবের বিশ্লেষকরা নড়েচড়ে বসেন।কোডেক্স’নামে যে সফটঅয়্যারে ডাটা বিশ্লেষণ করা হয় সেটি সংকেত দেয় যে ৫টি মৃতদেহে এক ব্যক্তির ডিএনএ পাওয়া গেছে।পাঁচ ভিক্টিমই কিশোরী।তাদের বয়স যথাক্রমে-১১,১৩,১৪,১৬এবং১৭বছর।এগুলোই ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা।৫টি আত্মহত্যার ৪টি মিরপুর এবং ১টি ঘটেছে মোহাম্মদপুর এলাকায়।২ টি ঘটেছে ২০১৯ সালের মার্চ ও অক্টোবর মাসে।বাকি তিনটির একটি এ বছরের মার্চ ও ২টি আগস্ট মাসে ঘটেছে।সময়,এলাকা, বয়স ও লিঙ্গ একই ধরনের হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে সিআইডির ধারণা হয় ভিক্টিমরা কোনো সিরিয়াল কিলারের শিকার।২০১৫ সালে হাইকোর্ট এক আদিবাসী নারীর অপমৃত্যু মামলার রায়ে এক ঐতিহাসিক নির্দেশ দেন।তাতে বলা হয়, কোনো নারীর অপমৃত্যু হলে,তাদের যৌনাঙ্গ থেকে শুক্রাণু সংগ্রহ করে সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ করতে হবে।দেখতে হবে অপমৃত্যুর আগে কোনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে কিনা ।তারপর থেকে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাব আদালতের নির্দেশ মেনে আসছে।সিআইডির এক কর্মকর্তা জানান,শিগগিরই ওই সিরিয়াল কিলার আরও হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে এমন আশঙ্কা নিয়ে তদন্তে নামেন তারা।তারা মোহোম্মদপুর ও কাফরুল থানায় হওয়া ৫টি অপমৃত্যুর মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বলেন।তাতে তারা জানতে পারেন,৫টি মামলার ভিক্টিমের সুরতহালে কোনো ধরনের জোরজবরদস্তির আলামত পাওয়া যায়নি।ময়নাতদন্তে প্রতিটি ঘটনাকে আত্মহত্যা বলা হয়েছে।এছাড়া, প্রত্যেক ভিক্টিম দরজা লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।৩টি ঘটনায় স্বজনদের খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে মৃতদেহ উদ্ধার করেছে।সব মিলিয়ে সিআইডির কর্মকর্তারা সিদ্ধান্তে আসেন তাদের প্রাথমিক ধারণা ভুল।এরপরই ওই অভিনয়ের আশ্রয় নেয় সিআইডি।